স্বদেশ ডেস্ক:
প্রেসিডেন্ট নিক্সন স্মরণীয় হয়েছিলেন ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জন্য। নিউজার্সির গভর্নর স্মরণীয় ব্রিজগেট কেলেঙ্কারির জন্য। তাদের পথ ধরে এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প এক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছেন, যার নাম শার্পিগেট।
যারা শার্পি শব্দের সঙ্গে পরিচিত নন তাদের জন্য বলা ভালো, এটি এক ধরনের মোটা কালির কলম। বোর্ডে মোটা অক্ষরে কিছু লিখতে বা আঁকতে শার্পি ব্যবহার করা হয়। তিন দিন আগে ওভাল অফিসে ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ানের গতিপথ নির্দেশ করতে ট্রাম্প একটি ম্যাপ দেখান। যাতে কেউ একজন শার্পি দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ডোরিয়ানের গতিপথ পরিবর্তন করে। উদ্দেশ্য এ কথা বোঝানো যে ডোরিয়ান ফ্লোরিডা, দুই ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ার পাশাপাশি আলাবামার ওপরেও আঘাত হানবে। সেই থেকে শার্পিগেটের জন্ম। গত এক সপ্তাহ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে এই আলাবামা নিয়ে পড়ে আছেন শুধু এ কথা বোঝাতে যে তিনি ঠিকই বলেছেন।
যে টুইটে ট্রাম্প আলাবামায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে এ কথা বলেন, তার এক ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর পাল্টা টুইটে জানায়, আলাবামা মোটেই ঝড়ের গতিপথে পড়ে না।
ট্রাম্প অবশ্য নিজের কথা ঠিক প্রমাণ করতে এ পর্যন্ত মোট নয়টি টুইট করেছেন। প্রতিটির এক কথা, তিনিই ঠিক। কম্পিউটার মডেলে প্রথমে এ কথাই বলা হয়েছিল। নিজের কথা প্রমাণে ট্রাম্প যে মানচিত্রটি ব্যবহার করেন, তা ঝড়ের চার দিন আগে তৈরি। সেখানে ডোরিয়ানের আলাবামায় আঘাত হানার সম্ভাবনা ৫ থেকে ২০ শতাংশ দেখানো হয়। কিন্তু ঝড়ের আগে আগে যে মানচিত্র আবহাওয়া দপ্তর প্রকাশ করে, তাতে ডোরিয়ানের আঘাত হানার সম্ভাবনা ৫ শতাংশেরও কম।
ট্রাম্প বারবার টুইট করা ছাড়াও টিভির একজন সাংবাদিককে ওভাল অফিসে ডেকে আনেন। হোয়াইট হাউস থেকে প্রায় ২৫০ শব্দের এক প্রেস রিলিজ দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা চালানো হয়। তাতেও ট্রাম্পকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা কমছে না দেখে ট্রাম্পের নির্দেশে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে দিয়ে সাফাই গেয়ে শোনানো হয়।
গতকাল শুক্রবার নিজেকে সঠিক প্রমাণের এই চেষ্টায় ট্রাম্প আরেক ধাপ এগিয়ে যান। এবার আবহাওয়া সংক্রান্ত সর্বোচ্চ দপ্তর ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নামে প্রকাশিত এক ভাষ্যে জানানো হয় ট্রাম্প যখন টুইট করেন, সে সময় ডোরিয়ানের আলাবামায় প্রবল বেগে আঘাত হানার কথা ছিল। একই ভাষ্যে, আলাবামায় ডোরিয়ান আঘাত হানবে না—সে কথা বলার জন্য আবহাওয়া দপ্তরকে তিরস্কার করা হয়।
ট্রাম্পের প্রথম টুইটের ছয় দিন পর আবহাওয়া প্রশাসনের এক বক্তব্য প্রকাশিত হলো। এত দিন তারা কেন বিলম্ব করল, সে কথার কোনো ব্যাখ্যা এখনো মেলেনি। আবহাওয়া প্রশাসনের পক্ষে কে এই বার্তা প্রদান করল, তারও কোনো উল্লেখ নেই। অনেকেরই ধারণা ট্রাম্পের নির্দেশেই এমন একটি ভাষ্য প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া কর্মীদের শ্রমিক ইউনিয়নের প্রধান এক বিবৃতিতে আবহাওয়া প্রশাসনের এই ভাষ্যকে ‘বিরক্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই ভাষ্যের সঙ্গে আবহাওয়া কর্মীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
একটা সামান্য ভুলকে ঠিক বানানোর জন্য ট্রাম্প যেরকম একগুঁয়েমি মনোভাব দেখিয়েছেন, তাতে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। তবে ট্রাম্পের জীবনীকার টিম ও’ব্রায়ান বলেছেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, ভুল স্বীকার করা মানেই নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা।
ট্রাম্পের একসময়ের সমর্থক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি বলেছেন, ‘আমরা এখন এমন এক রাজনৈতিক সময়ে বাস করছি, যখন সামান্য ‘দুঃখিত’ কথাটা বলার সৎ সাহস আমরা হারিয়ে ফেলেছি।’